বাংলা হান্ট ডেস্ক: নীল কিংবা কালো নয়, বাংলার বুকে রয়েছে জীবন্ত সবুজ মা কালীর (Sabuj Kali) মন্দির। অমাবস্যায় সারারাত বাঁশি বাজিয়ে পুজো করা হয় মাকে। শুনতে অবাক লাগছে তাই না! তবে এটাই সত্যি! মা ঘন্টা, কাঁসরের আওয়াজে তুষ্ট নন, তিনি তুষ্ট বাঁশির সুরে। ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে মনস্কামনার কথা একবার জানালে তিনি কাউকে খালি হাতে ফেরত পাঠান না। এই মন্দিরে এলে আপনার জীবনের সমস্ত সমস্যা হবে দূর। এই মন্দিরে মা কালীর বিগ্রহ দেখলে আপনার মনে জাগবে অপার ভক্তি। জীবন্ত মা কালীকে ঘিরে রয়েছে নানা ধরনের অলৌকিক কাহিনী। কোথায় রয়েছে এই মন্দির? কি তার অলৌকিক কাহিনী জানাবো আজকের প্রতিবেদনে।
কোথায় রয়েছে সবুজ মা কালীর (Sabuj Kali) মন্দির:
কলকাতা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হুগলি। সেখানেই নালিকুলেই রয়েছে সবুজ মা কালীর (Sabuj Kali) মন্দির। প্রতিদিন এই মন্দিরে জমায়েত হয় হাজার হাজার ভক্ত। শুধুমাত্র মায়ের একবার দর্শন পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকেন ভক্তরা। তবে মা অল্পতেই সন্তুষ্ট! মায়ের জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ খরচ করে ফুল, মিষ্টি কিনে পুজো দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে মায়ের কাছে নিজের মনস্কামনার কথা জানালে……… ইতিবাচক ফল পেয়ে থাকেন ভক্তরা। শোনা যায়, মায়ের পছন্দের জুঁই ফুল এবং ইলিশ যদি পুজোতে নিবেদন করা হয় তাহলে তিনি মহাপ্রসন্ন হন।
কত বছরের পুরনো এই মন্দিরঃ তবে জানিয়ে রাখি এই সবুজ মা কালীর (Sabuj Kali) মন্দির কিন্তু আজকের নয়। বহুকাল আগে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে এখানে। তবে এর পিছনে রয়েছে বিরাট এক কাহিনী। সে বহুকাল আগের ঘটনা। এই গ্রামেরই এক দরিদ্র গোঁড়া বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন বটকৃষ্ণ অধিকারী। শোনা গিয়েছে, সংসারের প্রতি বিন্দুমাত্র মতি ছিল না তাঁর। পরিবারের লোকেরা জোর করে বিয়ে দিলেও তাতেও খুব একটা সুবিধে হয়নি। তারপরও তিনি শ্মশান, ঘাটে যখন যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াতেন। এইভাবেই জীবন অতিবাহিত হতে থাকে বটকৃষ্ণ বাবুর। হঠাৎ একদিন মাঠে গরুর খোটা বাঁধছিলেন তিনি। সেই সময় তার পিছন থেকে এক সাদা বস্ত্র পরিহিত সন্ন্যাসী এসে তাকে বলেন, “অমুক স্থানে অমুক সময়ে তোমার দীক্ষা হবে, এরপরের ঘটনা সবটাই গুপ্ত।”
এরপর তিনি শ্মশানে দীর্ঘ সময় ধরে সাধনা করেন এবং সিদ্ধিলাভ করেন। হঠাতই একদিন তিনি স্বপ্নাদেশ পান মা কালীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করার। কিন্তু কুলীন বৈষ্ণব পরিবারে কালীপুজো কিংবা কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা “এতো মুখে আনাও পাপ”। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে তিনি বাড়িতে কালীর ঘট স্থাপন করেন। এইভাবেই বৈষ্ণব পরিবারে মায়ের আগমন ঘটে। কিন্তু তখনও মূর্তি স্থাপন হয়নি। এরপর আবারো তিনি স্বপ্নাদেশ পান, তবে এবারে স্বপ্নাদেশের মা কালি তো নন এতো অন্য কোনো রূপ, কে এই দেবী? আসলে সেদিন বটকৃষ্ণ অধিকারীর স্বপ্নে এসেছিলেন কালী এবং কৃষ্ণের একত্রিত রূপ। শ্যাম এবং শ্যামার নির্দেশে অবশেষে সবুজ বর্ণের মা কালীর (Sabuj Kali) বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হয় ১৩৫৭ বঙ্গাব্দে। জানা যায়, রটন্তী কালী পূজার দিনে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল।
এই মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করলেই আপনার মনে এক আলাদাই শান্তি জাগবে। কচি কলাপাতার সবুজ রং, চোখ দিয়ে রক্ষা করছে এই জগতকে। নিত্যদিন হাজার হাজার ভক্তরা এখানে জড়ো হন আহুতি দেওয়ার জন্য। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে রটন্তী কালী পুজোয় স্বয়ং বামদেবের তন্ত্র সামগ্রী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শোনা যায় প্রতি অমাবস্যায় এই মন্দিরে পুজোর জন্য বাজানো হয় বাঁশি। বাঁশির আওয়াজেই শেষ হয় পুজো। সবুজ মা কালীর (Sabuj Kali) একবার দর্শনের জন্য নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার ভক্তরা।





Made in India