বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট যতই এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে হুমকি-হুঁশিয়ারির বহর। প্রায়শই নেতা-মন্ত্রীদের মুখে শোনা যাচ্ছে হুমকির বুলি। এবার সেই ধারা অব্যাহত রেখে তৃণমূল (TMC) মন্ত্রী বেচারাম মান্নার (Becharam Manna) মুখে শোনা গেল পুলিশ পেটানোর হুঁশিয়ারি।
ঠিক কী বললেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী? এদিন প্রকাশ্যে মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘রাস্তার কাজ যেই করতে যাবেন, তাঁকে ধরে বেশ করে পিটিয়ে দেবেন। কোনও ঝামেলা হলে আমি দেখে নেব। পুলিশ যদি আসে পুলিশকে আছাড় মারব।’’
প্রসঙ্গত, এদিন হরিপাল থেকে ডানকুনি পযন্ত ১১টি জায়গায় সাবওয়ের দাবিতে এদিন চন্ডিতলার জয়কৃষ্ণপুরে একটি সভা করেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী। হুগলির চণ্ডীতলা, জয়কৃষ্ণপুর, নন্দনকানন, মোল্লাপাড়ায় ভূগর্ভস্থ পথের দাবিতে সমাবেশ করেন বেচারামরা। সভায় উপস্থিত ছিলেন শ্রীরামপুর হুগলি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল সভাপতি অরিন্দম গুঁইন, তৃণমূল বিধায়ক করবী মান্না এবং স্বাতী খন্দকাররা।
সেই সভা শেষ করে জয়কৃষ্ণপুর গ্রামেও যান কৃষি বিপণন মন্ত্রী। সেখানে গিয়ে সাবওয়ের দাবিতে সমাবেশ শেষে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এরপরই সেখানে গ্রামবাসীদের উদ্দেশে বার্তা দিয়ে তিঁনি বলেন, “ওই ১০০ ফুটের মধ্যে যে কাজ করতে আসবে, তাঁকে ধরে বেশ করে পিটিয়ে দেবে। বাকিটা আমি বুঝে নেব।” মন্ত্রীর কথা শুনে গ্রামবাসীরা জানান তাঁরা পুলিশের ভয় পাচ্ছেন । এরপরই বেচারাম মান্না তাঁদের বলেন, “রাস্তায় গাড়ি চলছে চলুক। সেখানে অবরোধ করা যাবে না। তখনই পুলিশ ঝামেলা করবে। কিন্তু কাজ বন্ধ করতে এলে, যদি পুলিশ বাধা দেয়, আমি পুলিশকে ধরে আছাড় মারব। এই খানেই মারব। এটা মনে রাখবেন।”
মন্ত্রীর এই বক্তব্য চাওর হতেই শোরগোল পরে গেছে গোটা রাজনৈতিক মহলে। খোদ রাজ্যের মন্ত্রীর মুখে পুলিশ পেটানোর হুমকি! হতবাক সকলে। অন্যদিকে, বেচারামের বেফাঁস মন্তব্যের পর তৃণমূলকে বিঁধতে বিন্দুমাত্র দেরি করেনি রাজ্যের বিরোধী শিবির। কটাক্ষ করে বিজেপির (BJP) পাল্টা মন্তব্য,‘‘বীরভূমের কেষ্ট পুলিশকে বোমা মারার হুমকি দিয়েছেন। আর সিঙ্গুরের বিধায়ক পুলিশকে আছাড় মারার হুমকি দিচ্ছেন।’’

তবে, ঘটনার কিছুক্ষনের মধ্যেই নিজের এই মন্তব্যের পেছনে যুক্তি দিয়েছেন বেচারাম। তিঁনি জানান, বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ‘দুর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ের সিক্স লেনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। ১১টি জায়গায় সাবওয়ের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। মিটিং হয়েছে ভূতল পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সাবওয়ের জন্য কোনও জায়গাই রাখা হয়নি। তাই গ্রামবাসীরা আশঙ্কা করছেন যে, সাবওয়ে হয়তো হবে না। তাই আমরা সমাবেশ করেছি। সমাবেশের পরে গ্রামে গেলে গ্রামবাসীরা বলছেন রাস্তার কাজ আটকালে পুলিশ বাধা দিচ্ছে। আমি বলেছি, রাস্তা অবরোধ করে কখনও কাজে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু যে জায়গায় সাবওয়ে হবে, সেখানে ১০০ ফুট পর্যন্ত কাজ বন্ধ থাকবে। সেখানে কেউ কাজ করতে গেলে গ্রামবাসীরা বাধা দেবেন। সেখানে পুলিশ যদি কিছু বলে আমরা বুঝে নেব। এটুকুই বলা হয়েছে।’ তিঁনি আরও বলেন, ‘‘আমি রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হয়ে কখনও এ কথা বলতে পারি! পুলিশও আমাদের এই আন্দোলনে সাহায্য করছে। দুর্গাপুর রোডে প্রায় হাজার লোক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। তাই গ্রামবাসীরা অনেক সময় আন্দোলনে বসেছেন। আমরা অবরোধের আন্দোলনে বিশ্বাস করি না।’’ তবে বেচারামের এই বেফাঁস মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূল তরফে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।





Made in India